বাটিক কথনঃ
জেনে নেই বাটিক সম্পর্কে-
-বাটিক প্রিন্ট কি?
-বাটিক প্রিন্টে কি রং করা হয় এবং কেন বাটিক প্রিন্টের কাপড়ের দামের ভিন্নতা হয়?
-বাটিক শব্দের অর্থ কি এবং এর উৎপত্তি কিভাবে?
বাটিক প্রিন্ট কি?
সুন্দরের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন। সেকারণেই মানুষ সৌন্দর্য্যবোধের প্রকাশ ঘটায় রং ও নকশার বিভিন্ন ব্যবহারের মাধ্যমে। সুদূর অতীতে যখন কাপড় ছাপানোর যন্ত্র ছিল না, তখন মানুষ হাতেই নানাভাবে কাপড় প্রিন্ট করত। যেমন ব্লক, বাটিক, টাইডাই ইত্যাদি। সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি এসব কাপড় ছাপানোর পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। কাপড়ের কিছু অংশে নকশা এঁকে তারপর নকশাটি মোম দিয়ে ঢেকে সেটা রঙে ডুবিয়ে যে পদ্ধতিতে কাপড় রং করা হয় তাকে বাটিক প্রিন্ট বলে। এক্ষেত্রে মোম লাগানো অংশে রং ভাল ভাবে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে তা অনবদ্য রূপলাভ করে।
বাটিকের রং হিসেবে প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক দু ধরনের রংই ব্যবহার করা হয়। নীল, তুঁতে, গাঁদাফুল, শিউলীফুল, পেঁয়াজের খোসা, হরতকী, খয়ের ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে বিশেষ উপায়ে রং তৈরি করে তা দিয়ে বাটিকের কাজ করা হয়। বাটিক প্রিন্টের কাপড়ের দাম নির্ভর করে এর রঙের ওপরে। কাপড়ে প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার হলে এর দাম তুলনামূলক ভাবে বেশি হয়। আর কাপড়ে রাসায়নিক রং ব্যবহার হলে এর দামতো কমই হয়, সব থেকে বড় যে সমস্যাটি হয়, অধিকাংশ সময়েই ওয়াশ করার পর কাপড়ের রং উঠে কাপড়ের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।
বাটিক শব্দটি ইন্দোনেশিয়ান ভাষা থেকে এসেছে। এই শব্দটি বাংলা করলে দাঁড়ায় একটি বিন্দু বা একটি ফোঁটা। বিন্দু বিন্দু মোমের সাহায্যেই ইন্দোনেশিয়ান বাটিক করা হতো। তবে পুরোনো ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ভারতীয় উপকূল থেকে বাটিকের প্রথম উত্পত্তি। তবে এর উত্কর্ষ ঘটে ইন্দোনেশিয়া থেকে চীন দেশে সপ্তম শতাব্দীর প্রথম দিকে।
তবে বাটিকের ক্ষেত্রে ভারতীয় মতটাই অধিক প্রচলিত। ভারতে বাটিক শিল্পের উত্পত্তি নিয়ে একটি গল্পও প্রচলিত রয়েছে –
একদিন এক মহিলা পুকুর ঘাটে হরতকী গাছের নিচে তাঁর পরিধানের বস্ত্র খুলে গোসল করতে পুকুরে নামেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে, কিছু মৌমাছি তাঁর কাপড়ের উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে। গোসল শেষে তিনি কাপড়টি পরতে গিয়ে দেখলেন যে, কাপড়ের ওপরে মৌমাছিদের মোমের দাগ। তাই তিনি সেই কাপড়টি পরিষ্কার করার জন্য হরতকী গাছের একেবারে নিচেই পুকুরের পানিতে কাপড়টি ধোয়ার চেষ্টা করলেন। এতে দেখা গেল যে, কাপড়ের যে জায়গাগুলোতে মৌমাছি দ্বারা মোম লেগে গিয়েছিল সেই জায়গাগুলি সাদা রয়ে গেছে এবং বাকি জায়গা হরতকীর রঙে খাকি রং হয়ে গেছে। সাদা অংশগুলোর জন্য কাপড়ে এক ধরনের নকশার সৃষ্টি হয়েছে। বলা হয়ে থাক এ ঘটনার ফলেই ভারতীয় উপকূল অঞ্চলে সর্বপ্রথম বাটিক শিল্পের জন্ম হয়।
বর্তমানে বাটিক প্রিন্টের কাপড় খুব জনপ্রিয়। বিশেষ করে হাল ফ্যাশনে বাটিক প্রিন্টের উপস্থিতি বেশ চোখে পড়ার মতো। বাটিক প্রিন্টের সব কিছুই দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। আগে শুধু সুতি কাপড়েই বাটিক করা হতো, কিন্তু এখন সুতির পাশাপাশি সিল্ক, গরদ, তসর, মসলিন, অ্যান্ডিকটন এমনকি খাদি কাপড়েও বাটিক প্রিন্ট করা হয়। ফলে তা আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল পোশাক হিসেবে সকলের মনে সহজেই স্থান করে নিয়েছে।
বাটিকের শাড়ি যেমন পরতে পারেন প্রতিদিনের প্রয়োজনে, তেমনি পরতে পারেন উত্সব-অনুষ্ঠানেও। বিশেষ করে বাটিক প্রিন্টের সিল্কের শাড়ি আপনাকে করে তুলবে অতুলনীয়। সালোয়ার-কামিজ-ওড়নাতে বাটিকের অনবদ্য কাজ পোশাকে এনে দেয় ঐতিহ্যের ছোঁয়া।
রঙের বাহারঃ
বাটিক মানেই নানা রঙের খেলা। আবার রং দেখলেই চিন্তা হয় যে,রং টা থাকবে কিনা ধোয়ার পরে!
বাটিক জামাগুলো সাধারণত কাচা রং দিয়ে করা হয়,অনেক সময় কারিগররা সময় স্বল্পতার জন্য শুকাতে পারেন না কয়েকদিন ধরে,তাই প্রথম দুএকবার ধোয়ার পরে হালকা কষ উঠতে পারে,বিশেষ করে ডিপ কালারগুলো।তবে এটা কিন্তু রং যাওয়া নয়!
মানে জামার কালার ফেড/হালকা হবেনা কিংবা কালার একটার সাথে আরেকটা লেগে যাবেনা।
সাবধানতা অবলম্বন করতে যেভাবে বাটিক ওয়াশ করবেন, তার পদ্ধতি
কাপড় প্রথমদিন লবন পানিতে ধুবেন…এক বালতি পানিতে সামান্য লবন মিশিয়ে ৫ মিনিট ভিজিয়ে রেখে হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন।প্রতিবারই শ্যাম্পু দিয়ে ধুতে পারলে ভালো,তবে পরবর্তীতে নরমালি ধুলেও সমস্যা নেই।
কড়া রোদে কাপড় শুকাতে দিবেন না।আলতো করে কাপর চিপতে হবে,খুব বেশী কচলে চিপবেন না,তাতে যেকোনো কাপরই নষ্ট হয় তাড়াতাড়ি।
কাপড় প্রথমে হালকা রোদে দিয়ে পানি ছড়িয়ে নিবেন,তারপর উল্টো পিঠ করে কড়া রোদে শুকাতে দিবেন।
গরম পানিতে কাপড় ধুবেন না।
কাপড়ের উলটো দিকে আয়রন করবেন।
বাটিক যারা রেগুলার ব্যবহার করেন,তারা জানেন যে,যেকোনো বাটিকের কাপর থেকেই কষ উঠতে পারে,এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
আরামদায়ক হবে কিনা বাটিক, এটা নিয়ে বলবো যে,বাটিক মানেই আরাম,আরাম,আরাম
ওয়াশ করার পরে বাটিক আরো নরম ও আরামদায়ক হয়।